লাইফস্টাইল ডেস্ক : ঘাড়ের ব্যাথা থেকে পেটের চর্বি, যোগার ১৮টি বিশেষ উপকারিতা জেনে নিন।
ফিটনেস: শারীরিকভাবে সুস্থ মানেই কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা নয়। তখনই পুরোপুরি ফিট যখন মানসিক, আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও সামাজিকভাবেই আপনি সুস্থ থাকবেন। যোগাসন আপনাকে আপনাকে সর্বদা ফিট রাখে শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সবভাবেই।
শারীরিক সমস্যার সমাধান: যোগের দ্বারা অনেক শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ব্লকেজ ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে একটা সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব হবে।
স্ট্রেস কমায়: সারা দিনের কাজের চাপে আমরা সবাই কমবেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর ক্লান্ত লাগে। অনেক সময়ই মেজাজ খারাপ থাকে। এর কারণ কিন্তু স্ট্রেস। যোগাসন কিন্তু এর থেকে মুক্তি দেয়। কিছু কিছু যোগাসন, প্রাণায়াম এবং ধ্যান করে স্ট্রেসকে দূরে রেখে প্রাণোচ্ছ জীবন যাপন করা সম্ভব।
মানসিক শান্তি: মানসিক শান্তি কে না চায়? একটুখানি মানসিক শান্তি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না প্রচেষ্টা। তাই নিয়ম করে একটু যোগাসন, ধ্যান, প্রাণায়াম, নিউরোবিক ইত্যাদির মাধ্যমে মনোসংযোগ এবং মানসিক শান্তি উভয়ই বাড়ানো সম্ভব। অভ্যাস করে দেখুন, নিশ্চিত ফল পাবেন।
এনার্জি বাড়ায়: সারা দিন শেষে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। বাড়ি ফেরার পর আর একটুও এনার্জি অবশিষ্ট থাকে না। সারা দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের যোগাভ্যাস কিন্তু সারা দিনের পরও এনার্জির জোগান দেবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ যোগাসন করলে কাজের ফাঁকেও ফ্রেশ আর এনার্জেটিক থাকা যাবে।
দুশ্চিন্তা দূর করে: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে কর্টিজল নামক হরমোনের ক্ষরণ হয়, তাও অনেকাংশে কমাতে সাহায্য করে যোগ ব্যায়াম। এরফলে, দুশ্চিন্তা, হাড়ের সমস্যা, পেটের চারিদিকে মেদ জমে যাওয়া এইসব সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: নানারকম যোগ ব্যায়াম নিয়মিত চর্চা করলে আমাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যোগাসন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে টিস্যু এবং পেশিকে শক্তি দেয়। শ্বেতকণিকাগুলোকে আরো উজ্জীবিত করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
স্থিতিস্থাপকতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখে: যোগ ব্যায়াম নিয়ম মতো চর্চা করলে আমাদের মাংসপেশি যেমন স্থিতিস্থাপক হয়ে ওঠে, তেমনই আমাদের ওজন সঠিক রেখে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শক্তি বৃদ্ধি করে: যোগ বিদ্যার মধ্যমে আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায়। এরফলে, আমাদের শারীরের প্রতিটি অঙ্গ সচল এবং মজবুত হতে শুরু করে। যেমন- কোমর, বুক, হাত, পা ইত্যাদি। এছাড়াও কোমরের ব্যাথা, বাতের সমস্যা ইত্যাদি প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে যোগ।
মন ভাল রাখে: যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় এবং এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের মন ভাল থাকে, ধৈর্য বাড়ে এবং গঠনমূলক চিন্তা করতে সম্মত হই আমরা।
অহং নিয়ন্ত্রণ রাখে: ইগো, হিংসা এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেও যোগ ব্যায়ামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এমনকি, নিয়মিত যোগ করলে যে কোনও অবস্থায় আমাদের শান্ত এবং ধৈর্য বজায় থাকে। এর ফলে, শরীর এবং মন ভালো থাকে।
মেরুদন্ড ঠিক রাখে: দৈনিক যোগাসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে। এতে মেরুদণ্ডে ছয়টি স্নায়ুকেন্দ্রে প্রবল জীবনীশক্তি সঞ্চারিত হয়। মনে গভীর আত্মপ্রত্যয়, আনন্দ এবং সুদৃঢ় ইচ্ছাশক্তি সঞ্চারিত হয়। আলাদা করে ওষুধ খাবার দরকার হয় না।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা: এই জাতীয় সমস্যার মোকাবিলায় সিদ্ধাসন খুবই কার্যকরী। মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা গুটিয়ে বসে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। এটি দেখতে অনেকটা পদ্মাসনের মতোই। সিদ্ধাসনে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় সেই সঙ্গে ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়ে।
হজমের সমস্যা: হজমের সমস্যা কমাতে পবনমুক্তাসন বা সুপ্ত বজ্রাসন করা যেতে পারে। পবনমুক্তাসনে চিৎ হয়ে শুয়ে প্রথমে ডান পা ভাঁজ করে পেটের সঙ্গে লাগাতে হবে। বাঁ পা তখন সোজা থাকবে। এর পরে একই ভাবে বাঁ পা ভাজ করে পেটে লাগতে হবে। ডান পা তখন সোজা থাকবে।
হাঁটুর ব্যথা: হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য উত্থানপদাসন করলে উপকার মিলবে। চেয়ারে বসে পা তোলা ও নামানো অর্থাৎ সিটেড লেগরাইজ বা পেলভিস ব্রিজ (চিৎ হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে উপরের দিকে তোলাকে পেলভিস ব্রিজ বলা হয়) করা যেতে পারে। এতে থাইয়ের পেশি সঙ্কুচিত বা প্রসারিত হয়।
কোমরের যন্ত্রণা: কোমরের যন্ত্রণা কমাতে ভুজঙ্গাসনও করা যেতে পারে। উপুড় হয়ে শুয়ে একটা পা উপরে তুলে একপদ সলভাসন বা পবনমুক্তাসন করলেও ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ঘাড়ের যন্ত্রণা: ঘাড়ের যন্ত্রণার জন্য আইসোমেট্রিক প্রেসার অভ্যাস করলে ফল মিলবে। দু’হাত মাথার পিছনে নিয়ে মাথাকে হাত দিয়ে ঘাড় সোজা করে চাপ দিতে হবে। এ ভাবে মাথাকে চার দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চাপ দিতে হবে। চিৎ হয়ে শুয়ে (ভুজঙ্গাসন) থেকে চিবুকে হাত দিয়ে চাপ দিলেও ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে।
পেট ও নিতম্বের চর্বি কমাতে: পেট ও নিতম্বের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে অর্ধকূর্মাসন খুবই কার্যকরী। মাটিতে বজ্রাসনে বসুন। এইবার হাত দুটি সোজা করে মাথার ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জড়ো করুন। পেট ও বুক যেন ঊরুর সঙ্গে লেগে থাকে। এই অবস্থায় মনেমনে কুড়ি পর্যন্ত গুনুন। ধীরে ধীরে সোজা হয়ে বসে শবাসনে বিশ্রাম নিন।