মে ০৩, ২০২৪


অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ইমন

অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল ইমন

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার আশুলিয়ায় ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যুতায়িত হয়ে চারদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে রা ফেরার দেশে চলে গেল এসএসসি পরিক্ষার্থী ইমন। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার, স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার শরীরের ৯০ শতাংশ ঝলসে গিয়েছিল।

নিহত জোনায়েদ হোসেন ইমন (১৬) আশুলিয়ার কবিরপুর এলাকার গফুর মিয়ার ছেলে। সে আশুলিয়ার কবিরপুরের অঞ্জনা মডেল হাই স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী হিসাবে পরিক্ষা দিচ্ছিলো।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী বাড়ইপাড়া এলাকার নির্মাণাধীন ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সড়ক পারাপারের সময় ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুতের তাড়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুত্বর আহত হয় ইমন। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

এদিকে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে অব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবীতে ২৫ ফেব্রুয়ারী সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় প্রায় এক ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সহপাঠী শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাসে বিক্ষুদ্ধরা সড়ক থেকে তাদের অবরোধ তুলে নেয়।

ওই দিন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিল, মহাসড়কের বাড়ইপাড়া বাস স্ট্যান্ডে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মান করা হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে। তবে ব্রীজের পশ্চিম ও পূর্ব পাশ দিয়ে বিদ্যুতের মেইন লাইন রয়েছে। ফুটওভার ব্রীজে ওঠার পূর্ব পাশের সিড়ির উপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনের তাড় টানা ছিলো। তবে ফুটওভার ব্রীজের পূর্বপাশের অংশ ছাউনি না দিয়েই কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

আর পল্লীবিদ্যুতের বেখায়ালীতে ফুটওভার ব্রিজ নির্মান হলেও তার সঙ্গে লাগানো বিদ্যুৎতের খুঁটি সারানো হয়নি। সম্পূর্ণ কাজ শেষ না করে অনিরাপদ রেখেই ব্রিজটি উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্রিজ নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পল্লীবিদ্যুতের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থারও দাবীও জানান।

নিহতের বাবা গফুর মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ফুটওভার ব্রীজটির অধিকাংশ কাজ শেষ হলেও পূর্ব পাশের সিড়ির উপর দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইনের তাড় টানা ছিলো। তবে ফুটওভার ব্রীজের পূর্বপাশের অংশ ছাউনি না দিয়েই কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর এই ব্রীজ দিয়েই পারাপারের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রান গেল ছেলের।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে প্রান দিতে হলো তার ছেলেকে। এই ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন তিনি।

অঞ্জনা মডেল হাই স্কুলের অর্থনীতি ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সজিব খান বলেন, ইমন অত্যন্ত মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। সে স্কুলেও নিয়মিত ছিল। শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপের শেষ পরীক্ষাটা যে ইমনকে মৃত্যু দিয়ে দিতে হবে তা হয়ত কেউই জানত না! তার অকাল এই মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তিনি।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ জানান, এঘটনায় নিহত ওই স্কুল শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

Related posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *